কিয়ামত দিবসে প্রিয় নবী (দ). এর শাফায়াত
বুখারী শরীফের হাদিস নং ৭০০২:
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) মাবাদ ইবনু হিলাল আল আনাযী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা বসরার অধিবাসী কিছু লোক একত্রিত হয়ে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। আমাদের সাথে সাবিত (রাঃ)-কে নিলাম, যাতে তিনি আমাদের কাছে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত শাফাআত সম্পর্কে হাদীস জিজ্ঞাসা করেন। আমরা তাকে তার মহলেই চাশতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়রত পেলাম। তার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন তিনি তার বিছানায় বসা অবস্থায় আছেন। অতঃপর আমরা সাবিত (রাঃ)-কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন শাফাআতের হাদীসটি জিজ্ঞাসার পূর্বে অন্য কিছু জিজ্ঞাসা না করেন।
তখন সাবিত (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ হামযা! এরা বসরাবাসী আপনার ভাই, তারা শাফাআতের হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছে।
তারপর আনাস (রাঃ) বললেনঃ আমাদের কাছে মুহাম্মাদ (দ.) হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিন মানুষ সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ভীত-সন্ত্রন্ত হয়ে পড়বে।
তাই তারা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বলবে; আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন।
তিনি বলবেনঃ এ কাজের জন্য আমী নই। বরং তোমরা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। কেননা, তিনি হলেন আল্লাহর খলীল।
তখন তারা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এ কাজের জন্য নই। তবে তোমরা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। কারণ তিনি আল্লাহর সাথে বাক্যালাপ করেছেন।
তখন তারা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে, তিনি বলবেনঃ আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। যেহেতু তিনি আল্লাহর রুহ ও বানী।
তারা তখন ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং মুহাম্মাদ -এর কাছে যাও।
এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলব, আমই এ কাজের জন্য। আমি তখন আমার প্রতিপালকের কাছে অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমাকে প্রশংসা সম্বলিত বাক্য ইলহাম করা হবে। যা দিয়ে আমি আল্লাহর প্রশংসা করব, যেগুলো এখন আমার জানা নেই। আমি সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে প্রশংসা করব এবং সিজদায় পড়ে যাব। তখন আমাকে বলা হবে,
ইয়া মুহাম্মাদ!
মাথা ওঠাও।
তুমি বল, তোমার কথা শোনা হবে।
চাও, তা দেওয়া হবে।
সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে।
তখন আমি বলবো,
হে আমার প্রতিপালক!
আমার উম্মাত। আমার উম্মাত।
বলা হবে, যাও,
যাদের হৃদয়ে যবের দানা পরিমান ঈমান আছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দাও,
আমি যেয়ে এমনই করব।
তারপর আমি ফিরে আসব এবং পূনরায় সেসব প্রশংসা বাক্য দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করবো এবং সিজদায় পঁড়ে যাবো।
তখন বলা হবে,
ইয়া মুহাম্মাদ!
মাথা ওঠাও।
তোমার কথা শোনা হবে।
চাও, দেয়া হবে।
সুপারিশ কর, গ্রহন করা হবে।
তখনো আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক!
আমার উম্মাত। আমার উম্মাত।
অতঃপর বলা হবে,
যাও, যাদের এক অনু কিংবা সরিষা পরিমাণ ইমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের কর।
আমি গিয়ে তাই করব।
আমি পূনরায় প্রত্যাবর্তন করবো এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবো।
আর সিজদায় পড়ে যাবো।
আমাকে বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও।
বল, তোমার বক্তব্য শোনা হবে।
চাও, দেওয়া হবে।
সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে।
আমি তখন বলবো, হে আমার প্রতিপালক,
আমার উম্মাত, আমার উম্মাত।
এরপর আল্লাহ বলবেন,
যাও, যাদের অন্তরে সরিষার দানা অপেক্ষা ক্ষুদ্র পরিমাণও ঈমান থাকে, তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আন।
আমি যাবো এবং তাই করবো।
আমরা যখন আনাস (রাঃ)-এর নিকট থেকে বের হয়ে আসছিলাম, তখন আমি আমার সাথীদের কোন একজনকে বললাম, আমরা যদি আবূ খলীফার বাড়িতে আত্নগোপনরত হাসান বসরীর কাছে গিয়ে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি তাঁর কাছে বর্ণনা করতাম। এরপর আমরা হাসান বসরীর কাছে এসে তাকে অনুমতির সালাম দিলাম। তিনি আমাদেরকে প্রবেশ করতে অনুমতি দিলেন। আমরা তাকে বললাম, হে আবূ সাঈদ! আমরা আপনারই ভাই আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর কাছ থেকে আপনার কাছে আসলাম।
শাফাআত সম্পর্কে তিনি যেরুপ বর্ণনা দিয়েছেন, অনুরুপ বর্ণনা করতে আর আর কাউকে দেখিনি। তিনি বললেনঃ আমার কাছে সেটি বর্ণনা কর। আমরা তাঁকে হাদীসটি বর্ণনা করে শোনালাম। এরপর আমরা শেষস্থলে এসে বর্ণনা শেষ করলাম।
তিনি বললেনঃ আরো বর্ণনা কর। আমরা বললাম, তিনি তো এর বেশি আমাদের কাছে বর্ণনা দেননি। তিনি বললেনঃ জানিনা, তিনি কি ভুলেই গেলেন, না তোমরা নির্ভরশীল – হয়ে পড়বে বলে অবশিষ্টটুকু বর্ণনা করতে অপছন্দ করলেন, বিশ বছর পুর্বে যখন তিনি শক্তি সামর্থ্যে ও শক্তিতে মজবুত ছিলেন, তখন আমার কাছেও হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন।
আমরা বললাম, হে আবূ সাঈদ! আমাদের কাছে হাদীসটি বর্ণনা করুন। তিনি হাসলেন এবং বললেনঃ সৃষ্টি করা হয়েছে, মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়। আমি তো বর্ণনার উদ্দেশ্যেই তোমাদের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম।
তিনি তোমাদের কাছে যা বর্ণনা করেছেন, আমার কাছেও তা বর্ণনা করেছেন- তবে পরে এটুকুও বলেছিলেন,
আমি চতূর্থবার ফিরে আসবো এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করব এবং সিজদায় পড়ে যাবো।
তখন বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও।
বল, -তোমার কথা শোনা হবে।
চাও! দেওয়া হবে।
শাফাআত কর, গ্রহণ করা হবে।
আমি বলব,
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাদের সম্পর্কে শাফাআত করার অনুমতি দান কর,
যারা -লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।
তখন আল্লাহব লবেন, আমার ইজ্জত, আমার পরাক্রমশীলতা, আমার বড়ত্ব ও আমার মহত্তের কসম! যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনব।