আল্লাহ পাক বলেন-আমি মানব জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। সূরা যারিয়াত, আয়াত-51/56
মানব জাতির ইবাদত পালনে ত্রুটি বিচ্যুতি হলে মহান আল্লাহ তা পুষিয়ে নেয়ারও ব্যবস্থা রেখেছেন। রোজা হল মহান আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে অন্যতম । আর এই রোজা পালনে যে সকল ত্রুটি – বিচ্যুতি হয়ে থাকে , তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য আল্লাহ ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায়ের বিধান রেখেছেন । এ বিধান আমাদের সুবিধার্থে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা সমীচীন নয় । কেননা ইসলাম হ’ল একমাত্র অভ্রান্ত , ত্রুটিমুক্ত ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা । দ্বীন ইসলাম যখন পূর্ণতা পেয়েছে , তখন অপূর্ণতার সংশয় মনে ঠাঁই দেয়া নিতান্তই র্মূখ।
ছাদাক্বাতুল ফিতর কার উপর ফরয :
ছাদাক্বাতুল ফিতর মুসলমান নারী – পুরুষ , ছোট – বড় , সকলের জন্য আদায় করা ফরয । এ মর্মে ইবনে ওমর ( রাঃ ) বলেন , রাসূলুল্লাহ ( দঃ ) স্বীয় উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন , নারী ও পুরুষ , ছোট ও বড় সকলের উপর মাথা পিছু এক ছা ‘ পরিমাণ খেজুর বা যব ছদকাতুল ফিতরা হিসাবে ফরয করেছেন এবং তা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন । ( বুখারী – মুসলিম , মিশকাত হা / ১৮১৫ ) । ঈদের দিন সকালেও যদি কেউ মৃত্যুবরণ করেন , তার জন্য ফিতরা আদায় করা ফরয নয় । আবার ঈদের দিন সকালে কোন বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ফরয । ছাদাক্বাতুল ফিতর হ’ল জানের ছদকা, মালের নয় । বিধায় জীবিত সকল মুসলিমের জানের ছদকা আদায় করা ওয়াজিব । কোন ব্যক্তি ছিয়াম পালনে সক্ষম হলেও তার জন্য ফিতরা ফরয । ( মিরআত ৬/১৮৫ পৃঃ )
ছাদাক্বাতুল ফিতরের পরিমাণ :
প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক ছা ‘ খাদ্যশস্য ছদকাতুল ফিতর হিসাবে আদায় করতে হবে । ছা ‘ হচ্ছে তৎকালীন সময়ের এক ধরনের ওযন করার পাত্র । নবী করীম ( দঃ ) -এর যুগের ছা ‘ হিসাবে এক ছা ‘ – তে সবচেয়ে ভাল গম ২ কেজি ৪০ গ্রাম হয় । বিভিন্ন ফসলের ছা ‘ ওযন হিসাবে বিভিন্ন হয় । এক ছা ‘ চাউল প্রায় ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হয় । তবে ওযন হিসাবে এক ছা ‘ গম , যব , ভুট্টা , খেজুর ইত্যাদি ২ কেজি ২২৫ গ্রামের বেশী হয় । ইরাকী এক ছা ‘ হিসাবে ২ কেজি ৪০০ গ্রাম অথবা প্রমাণ সাইজ হাতের পূর্ণ চার অঞ্জলী চাউল । বর্তমানে আমাদের দেশে এক ছা’তে আড়াই কেজি চাল হয় ।
ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় ও বণ্টনের সময়কাল:
ছাদাক্বাতুল ফিতর ঈদের দু’এক দিন পূর্বে আদায় ও পরে বণ্টন করা ওয়াজিব । ঈদুল ফিতরের পূর্বে ছাহাবায়ে কেরাম বায়তুল মাল জমাকারীর নিকটে ফিতরা জমা করতেন । ফিততা আদায়ের এটাই সুন্নাতী পন্থা, যা ঈদের ছালাতের পর হক্বদারগণের মধ্যে বণ্টন করতে হবে [ বুখারী হা / ১৫১১, যাকাত অধ্যায় অনুচ্ছেদ -77
রোজার কাযা ও কাফফারা
আল্লাহ অনুগ্রহ করে বান্দার জন্য রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। বান্দা তা সাগ্রহে পালন করে। যেকোনো কারণে সময়মতো রোজা রাখতে না পারলে, তা কাজা আদায় করতে হয় এবং রোজা রেখে কোনো ওজর বা অসুবিধার কারণে ভেঙে ফেললে তা-ও পরে কাজা আদায় করতে হয়। কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা। কাজা রোজা যেকোনো সময় সুবিধামতো আদায় করা যায়, সকল কাজা রোজা একত্রে আদায় করা জরুরি নয়। রোজা রেখে কোনো ধরনের ধোঁকায় বা তাড়নায় বিপথগামী হয়ে বিনা ওজরে তা ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন। এর জন্য কাজা ও কাফফারা উভয় আদায় করতে হয়।
কাফফারা তিনভাবে আদায় করা যায়।
প্রথমত, একটি গোলাম আজাদ করা বা দাস মুক্ত করা,
দ্বিতীয়ত, ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা পালন করা।
তৃতীয়ত, ৬০ জন মিসকিনকে দুবেলা ভালোভাবে তৃপ্তিসহকারে আহার করানো বা আপ্যায়ন করা।
কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি, আর কাফফারা হলো ৬০টি। এ রকম ওজর ছাড়া যে কয়টা রোজা রেখে ভাঙবে প্রতিটির পরিবর্তে একটি করে কাজা এবং একই রমজান মাসের জন্য তার সঙ্গে যুক্ত হবে একটি কাফফারা। অর্থাৎ একটি রোজা যৌক্তিক কারণ ছাড়া ভাঙলে তার জন্য কাজা ও কাফফারা হবে ৬১টি রোজা, দুটি ভাঙলে হবে ৬২টি রোজা, তিনটি ভাঙলে হবে ৬৩টি রোজা। অনুরূপ ৩০টি ভাঙলে হবে ৯০টি রোজা।
কাফফারার রোজা একত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আদায় করতে হয়। কারও যদি কাজা ও কাফফারাসহ মোট ৬১ বা তারও বেশি হয় তবে কমপক্ষে ৬১টি রোজা একটানা আদায় করতে হবে। কাফফারার রোজার মাঝে বিরতি হলে বা ভাঙলে আরেকটি কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে। অর্থাৎ ৬১ পূর্ণ হওয়ার আগে বিরতি হলে পুনরায় নতুন করে ১ থেকে শুরু করে ৬১ পূর্ণ করতে হবে। যে রোজাগুলো রাখা হলো তা নফল হিসেবে পরিগণিত হবে। কোনো গ্রহণযোগ্য ওজর বা আপদের কারণে ভাঙতে হলে তা ক্ষমার্হ। নারীদের বিশেষ বিরতির সময় বাদ দিয়ে ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হবে।
কাফফারা, ফিদইয়া ও সদাকাতুল ফিতর তাদেরকে দেওয়া যাবে, যাঁরা জাকাত তথা ফরজ ও ওয়াজিব সদকা গ্রহণ করতে পারেন। যথা: ‘ফকির, মিসকিন, সদকা কর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদ ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির।’ (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ৬০)।
এজেএসএম ট্রাস্ট এ কেন আপনার রোজার কাফফারা, ফিদইয়া ও সদাকাতুল ফিতর অেনুদান দিবেন?
আনজুমান এ জাহাঁগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া ট্রাস্ট (এজেএসএম ট্রাস্ট) বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিতি একটি অ-লাভজনক ট্রাস্টী প্রতিষ্ঠান। আমরা সমগ্র বাংলাদেশে শতাধিক মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, মুছাফিরখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং, কুরআন মুখস্থকারী কেন্দ্র ও করআন শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে পরিচালনা করছি। আমাদের এতিমখানা ও মুছাফিরখানায় সহস্রাধিক এতিম ও মুছাফির রয়েছে। কুরআন মুখস্থকরণ কেন্দ্রেও প্রচুর অসহায় পরিবারের সন্তানেরা রয়েছে। এদের প্রতিপালন, খাবার ব্যবস্থাপনা, পোষাক, উন্নত চিকিৎসা সেবায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।
তাই আপনারা যারা রোজার কাফফারা, ফিদইয়া ও সদাকাতুল ফিতর আদায় করবেন তাদের কাছে বিনীত আরজ আপনারা আমাদের সদকাতুল ফিতর, রোজার কাজা কাফফারা ফান্ডে দান করুন। 60জন মিসকিন ২ বেলা খাবার বাবদ ৳180 ডলার দান করুন। আমরা আপনার দানকৃত অর্থ যথাযথ কাজে ব্যয় করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।